বিয়ের অন্যতম প্রধান এবং গুরুত্বপূর্ণ অলংকার হচ্ছে নাকফুল। আর এই নাকফুলের পিছনেই লুকিয়ে রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। প্রকৃতির স্বাভাবিক নিয়মেই এই দীর্ঘ সময়ের মধ্যে বিবর্তন ঘটেছে মানুষের তৃতীয় ইন্দ্রিয়ের শোভা বর্ধনকারী অলঙ্কারের। এরপরে পরিবারের প্রভাব এবং প্রাচুর্য বোঝাতে নাকফুলের মধ্যে পাথরের ব্যবহার শুরু হয়। হীরে, মুক্ত, পান্না, কুন্দন প্রভৃতি খোদাই করা শুরু হয় নাকফুলে। একই সঙ্গে শুরু হয় নানান ধরনের নকশার প্রচলন। এই ভাবেই শুরু হয় নাকফুলের বিবর্তন।
নানাবিধ ঐতিহাসিক তথ্য থেকে জানা যায় যে নবম এবং দশম শতাব্দী থেকে জনপ্রিয় হতে শুরু করে নাকফুল অলঙ্কার। মহিলাদের বৈবাহিক জীবনের চিহ্ন হিসেবে স্থান দেওয়া হয় এই নথ বা নাকফুলকে।।
ষোড়শ শতক থেকে সোনার অলঙ্কারের নকশা এবং আকারের ক্ষেত্রে ঘটে বিরাট বিপ্লব। শুরু হয় অলঙ্কারের বিবর্তন। যার ব্যতিক্রম হয়নি নাকফুলের ক্ষেত্রেও। নানান আকারের এবং নকশার ব্যবহার শুরু হয়। সমাজের উচ্চবিত্ত বা সমৃদ্ধশালী পরিবারের মহিলাদের নাকে উজ্জ্বল হয়ে থাকত সেই অলঙ্কার। সেই সময় থেকেই অতিমাত্রায় প্রচার পায় নাকফুল।
Click The Picture Above To see Gold Nose Pins Collection
অধিকাংশ ইতিহাসবিদের দাবি নাকফুলের আবিষ্কার হয় প্রাচ্যের মাটিতে। মোঘলদের মাধ্যমে তা ভারতে পসার লাভ করে। প্রাথমিক অবস্থায় কেবল মুসলিম সম্প্রদায়ের মহিলারাই ব্যবহার করতে অভ্যস্ত ছিল। পরে ভারতীয় সংস্কৃতির সঙ্গে মুসলিম সংস্কৃতির একত্রীকরণ ঘটে এবং হিন্দু সমাজেও জায়গা করে নেয় নাকফুল। কালক্রমে হিন্দু বিবাহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে যায় নাকফুল।
তবে কিছু ইতিহাসবিদদের দাবি অনুসারে ভারতীয় সংস্কৃতির অনেক পুরনো অঙ্গ নাকফুল। তাদের পালটা যুক্তি পাঁচ হাজার বছর আগে হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তিতে নাকফুলের ব্যবহার করা হতো। যেগুলির অনেক প্রমাণ পাওয়া গিয়েছে। অনেক পুরনো গুহা এবং মন্দিরের মধ্যে অনেক খোদাই করা মূর্তিতেও নাকফুলসহ দেবীর মূর্তি দেখা গিয়েছে।
Click The Picture Above To see Diamond Nose Pins Collection
সমগ্র ভারত জুড়ে সকল সুন্দর নথগুলির মধ্যে, গারোয়ালের ‘তেহরি নথ’-এ সৌন্দর্য সবসময় দর্শকদের হতবাক করে দেয়। গারোয়ালী নথ চর্মসার কুমায়নী নথের তুলনায় অনেক বেশি বিশালাকৃতি নাকফুল, সোনায় মোড়া থাকে এবং সাধারণত কল্কা, ময়ূর এবং ফুলের প্যাটার্নের সূক্ষ্ম ডিজাইন দ্বারা অলংকৃত থাকে। মনে করা হয় এটি বিশুদ্ধতার প্রতীক এবং বিয়ের কনের কুমারীত্বের চিহ্ন বহন করে। বাঙালি মহিলারা নাকের একদিকের লতির মাঝে ফুট করে নাকফুল পড়তে অভ্যস্ত। অধিকাংশ মহিলাদেরই বাঁদিকের লতিতে নাকফুল অলংকৃত থাকে।